বাণিজ্য
প্রতিবেদক: BS Software
আপডেট: ৪৭ দিন আগে
দেড় দশক আগে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ডেনিম কাপড়ের উৎপাদন শুরু করে আরগন ডেনিম। তাদের কারখানার এখন মাসে ১৮ লাখ গজ ডেনিম কাপড় উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ কাপড়ের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশই টেকসই উপকরণে তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ হচ্ছে পুরোনো বা ব্যবহৃত ডেনিম প্যান্টের উপকরণ।
এমন তথ্য দিয়ে আরগন ডেনিমের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকার ব্র্যান্ডগুলো টেকসই উপকরণে তৈরি জিনসের পোশাক কেনায় বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও মোট রপ্তানির মাত্র ৫ শতাংশ কাপড় ছিল টেকসই উপকরণের, যা এখন অর্ধেকের কাছাকাছি।
বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর শেষ দিন আজ মঙ্গলবার বিকেলে আরগন ডেনিমের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। সেই সঙ্গে দুই দিনের এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও কথা বলেন। তাঁরা জানান, বিশ্বজুড়ে ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোও টেকসই পণ্য কেনায় জোর দিচ্ছে। সে অনুযায়ী দেশীয় উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগ করছেন।
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক টিম গ্রুপ জিনসের প্যান্ট তৈরি করে। জিনসের ওয়াশিংয়ে পানির ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দিয়েছে তারা। এ জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি।
টিম ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ডিজাইনার জয় প্রকাশ দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, একটা জিনস ওয়াশে ৯০ লিটারের মতো পানি লাগে। তবে লেজারের মাধ্যমে ডিজাইন ও মাইক্রো বাবল টিট্রমেন্টের মাধ্যমে পানি, বিদ্যুৎ ও সময় বাঁচানো হচ্ছে। এ ছাড়া ওজোন ওয়াশের মাধ্যমে পানি ছাড়া গ্যাস ও রাসায়নিক দিয়েই কাজ করা হয়। এসব প্রক্রিয়ায় খরচ একটু বেশি হলেও এভাবে উৎপাদিত পণ্যে ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো গতকাল শুরু হয়। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান, চীন, তুরস্ক, স্পেন ও ইতালির ৪৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তাদের মধ্যে রয়েছে ডেনিম কাপড় উৎপাদনকারী মিল, ডেনিম ও নন–ডেনিম পোশাক প্রস্তুতকারক, ওয়াশিং লন্ড্রি, সরঞ্জাম, রাসায়নিক ও যন্ত্রপাতি উৎপাদক এবং বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
আজ দুপুরের পর প্রদর্শনী প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা স্টলগুলোয় ভিড় করছেন। তাঁরা নতুন পণ্য ও প্রযুক্তির খোঁজ–খবর নিচ্ছিলেন। বিকেলের দিকে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ে।
শিনশিন অ্যাপারেলস জিনসের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পোশাক প্রদর্শন করছে। প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় প্রতি মাসে ২০ লাখ পিস জিনসের পণ্য তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। তাদের রপ্তানি করা জিনসের গড় মূল্য সাড়ে ৪ ডলার।
ব্যবসা কেমন চলছে জানতে চাইলে শিনশিন অ্যাপারেলসের উপদেষ্টা সাজ্জাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় আগামী গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ ৩০ শতাংশ কমেছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রপ্তানিতে বৈচিত্র্য বাড়াতে ব্লেজার উৎপাদন করেছে শিনশিন।
এদিকে ডেনিম এক্সপোতে আজ বিকেলে ‘পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ: জিএসপি প্লাস ও এলডিসি উত্তরণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান; বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান; শিনশিন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহেল সাদাত; ইভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ রাঈদ চৌধুরী এবং এইচঅ্যান্ডএমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার প্রধান জিয়াউর রহমান। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ।